দীর্ঘ পাঁচ বছর তিন মাস পনেরো দিন পর হঠাৎ দেখা নীলাভ আর রুমির।
রুমি রোজ গুনে হিসেব করে বিচ্ছেদের দিন। একসময় দুজনের সম্পর্ক ছিল এক আত্মার মতো। দুজনেই অফিস কলিগ ছিল। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে নীলাভ একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি নেয়। সেখানেই পরিচয় রুমির সঙ্গে। প্রথমে বন্ধুত্ব, তারপর প্রেম। ঠিক ছিল, একটি বাড়ি করে দুজনেই বিয়ে করবে। দিন এগোচ্ছিল, প্রেমের সম্পর্ক দীর্ঘ হচ্ছিল, মায়ার বাঁধন শক্ত হচ্ছিল। আদরে জড়িয়ে বয়স বাড়ছিল তাদের সম্পর্কের।
হঠাৎ ছন্দপতন নীলাভের বাড়ি থেকে।
নীলাভের মা ওর বিয়ে ঠিক করে দেন পাড়ার দয়িতার সঙ্গে। দয়িতা নীলাভের ছোটবেলার বন্ধু। মা অসুস্থ, তাই কোনো পরিস্থিতিতেই তাকে কিছু বলা যাবে না। তবুও নীলাভ চেষ্টা করেছিল, কিন্তু লাভ হয়নি।
সেই অপ্রত্যাশিত দেখা হওয়ার মুহূর্তে রুমির সারা শরীরে এক ঠান্ডা বাতাস খেলে গেল।
সব কিছু মনে পড়ে রুমির। দিনের পর দিন অফিস ছুটির পর হাঁটতে হাঁটতে মাইলের পর মাইল গল্প করা। ছুটির দিনে গরমের সন্ধ্যায় গঙ্গার ঘাটে বসে হাতের ওপর হাত রেখে কথা বলা। বৃষ্টির দিনে এক ছাতার তলায় দুজনেই ভিজে যাওয়া।
ময়দানে পাশাপাশি বসে দূরের মেঘ দেখা।
ফুচকা খেতে গিয়ে ঝাল লেগে হেঁচকি উঠলে, নীলাভের ফুঁ দিয়ে মাথায় হালকা বাতাস দেওয়া।
রুমি ঘেমে গেলে আলতো হাতে রুমাল দিয়ে মুখ মুছে দেওয়া।
মাসের মাইনে হলে একে অপরকে গিফট দেওয়া — সবই চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে রুমি।
রাতের পর রাত ফোনে কথা বলা।
একজনের জ্বর হলে, অন্যজনের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়া।
কিন্তু আজকের এই সন্ধ্যা রুমি চায়নি।
রুমি চেয়েছিল এক কাপ চায়ে নীলাভকে পাশে।
চেয়েছিল, নীলাভের জ্বর হলে যত্ন করতে।
চেয়েছিল, নীলাভের বুকে মাথা রেখে শান্ত নদীর মতো হয়ে থাকতে।
কিন্তু রুমি আর পারে না নীলাভের চাপ দাড়িতে হাত বোলাতে।
পারছে না তার গাল ছুঁয়ে বলতে —
“কি মশাই! বড্ড হ্যান্ডসাম লাগছে যে!”
রুমি হাজার চাইলেও আর ওর একান্ত নিজের নীলাভকে একটিবার ছুঁতে পারছে না।
নীলাভের বিয়ে হয়েছে দয়িতার সঙ্গে।
দয়িতা খুব ভালো মেয়ে।
নীলাভকে খুব যত্ন করে, ভালোবাসে।
নীলাভ যাকে রুমি মনে করত শিশুসুলভ, যাকে একমাত্র সেও সামলাতে পারত — তাকেই আজ দয়িতা বেশ ভালোভাবেই সামলেছে।
নীলাভ ভালো আছে। ওর একটি ছোট্ট রাজপুত্র হয়েছে।
সুখের সংসার — আদরে, সোহাগে, মায়ায়, ভালোবাসায় নীলাভ সত্যিই ভালো আছে।
একা রয়ে গেছে রুমি।
একদম একা।
শুধু মাত্র নীলাভের সঙ্গে কাটানো সেই মুহূর্তগুলো নিয়ে।
রুমি চাইলেও আর কাউকে কাছে টানতে পারে না, ভালোবাসতেও পারে না।
রুমি একদম একা।
এই একাকীত্ব নিয়েই রুমি বাঁচবে সারাজীবন।