মায়ার অপেক্ষা — একলা দীপ্তর গল্প

দীপ্তর রোজ ঠিক এমন করেই কাটছে। অফিস, বাড়ি, অফিস।

আবারও একটি নতুন সকাল, নতুন সূর্যোদয় পূবের আকাশে। দীপ্ত অফিসে বসে ল্যাপটপ খুলে মেইল এর রিপোর্ট তৈরি করছেন, হঠাৎ চোখ গেলো সামনের জানালায় দুটো শালিক নিজেদের মধ্যে কেমন কথা বলছে। একে অন্যের দিকে মায়া বিলিয়ে দিচ্ছে। দীপ্তর ঠোঁটে মুচকি হাসি। সাথে মনটা একটু হতাশ হলো দীপ্তর এটা ভেবে যে যৌবন শেষে আজ সে মধ্য বয়সী, কিন্তু প্রেম এলোনা, ভালোবাসা এলোনা। দীপ্তর যৌবনে প্রেম আসেনি তা নয়, প্রেম এসেছিলো, হাতে হাত রাখা হয়েছিলো, শরীরে শরীর মিশেছিলে, কিন্তু তার সাথে মায়ায় আবদ্ধ হওয়া হয়নি। সে দীপ্তকে মায়ায় বাঁধতে পারেনি। এখন দীপ্ত সেটা বুঝতে পারে। তারপরও তাদের দুজনের প্রেম আলগা হলো, দুজনের পথ আলাদা হলো। তারপর আর প্রেমে পড়া হয়নি। মাঝে পেরিয়ে গেছে অনেকটা সময়। এখন দীপ্তর বড্ড ইচ্ছে হয় কেউ একজন যদি থাকতো, ফোন করে জিজ্ঞেস করার “কেমন আছি?”, সময়মতো খাওয়া দাওয়া করছি কিনা, কেউ যদি সকালে অফিস যাওয়ার সময় ফোন করে বলতো “সাবধানে অফিস যেও”। সে যদি বায়না করতো ফুচকা খাওয়ার। সে যদি অধীর বেকুলতায় অপেক্ষা করতো দীপ্তর ফোনের, ফোন করতে দেরী হলে সে যদি গাল ফুলিয়ে রাগ করতো। আবার সাইকেলের পিছনে বসে সে যদি কাঁধে তার হাত দুটো দিয়ে দীপ্তর ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলে বলতো “তোমায় ভালোবাসি”। কখনো সে যদি দীপ্তর একগাল চাপ দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে দিতো। কখনো পাশে বসে একাধারে বকবক করে চলতো। কখনো তার চুলের বিনুনা টা দিয়ে নাকে ঘসে দিতো। কখনো বা আবার প্রচন্ড শাসন করতো যেমন মা ছোটোবেলায় করতেন। ভাবতে ভাবতেই একটু হাসি নিয়ে আবার রিপোর্টে মগ্ন দীপ্ত।

আসলে কি জানেন, মানুষ যখন তখন যার তার প্রেমে পড়তে পারে। বরং মায়ায় পড়া হয় না। প্রেম চাইলেই তাঁর গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে। আর মায়া এমন একটা জিনিস, চাইলেই যেখান থেকে ফিরে আসা যায় না। তাই, মায়ায় পরবেন যাতে শেষ নিঃশ্বাস অব্দি তার হয়েই বেঁচে থাকতে পারেন।

আর অপেক্ষা করুন সেই দিনের যেদিন কোনো এক ময়ূরাক্ষী মায়াবীনি আপনার জীবনে ঠিক আসবে, যে আপনাকে তার সবটুকু মায়া দিয়ে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ফেলবে। সেখান থেকে আপনি আর বেরোতে পারবেন না। মায়াবিনী একবার বেঁধে ফেলল আর ছাড়ানো যায় না।

অপেক্ষা সুন্দর, অপেক্ষা করুন, তারপর বড্ড ভালোলাগায় আপনি উদ্বুদ্ধ হবেন।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *