ময়ুরাক্ষীর মাঝেমধ্যেই কাজের জন্য এদিক-ওদিক যেতে হয়। যতদিন বাইরে থাকে, ভীষণ ব্যস্ততায় কেটে যায় দিনগুলো। শুধু রাতের ঘুমের জন্য হোটেলে ফেরে—বাকি সময় কেটে যায় মার্কেট ভিজিট, ডিলার মিটিং ইত্যাদি নিয়ে।
সেদিনটা ছিল শেষ কাজের দিন। সকালে তৈরি হয়ে একটি ডিলার ভিজিট করার কথা, তারপর বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেবে।
ডিলারের কাছে বসে, একমনে তার কাজ বোঝাচ্ছিল ময়ুরাক্ষী। আশপাশে কী ঘটছে, সে দিকে তার খেয়াল ছিল না—সে ছিল সম্পূর্ণ মনোযোগী নিজের কথায়।
ঠিক তখনই, একজন ব্যক্তি তার বাঁদিকে এসে দাঁড়িয়ে ময়ুরাক্ষীর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিলেন।
কয়েকবার চোখের কোণে তাকিয়ে বিষয়টি লক্ষ্য করে ময়ুরাক্ষী। লোকটির মুখভর্তি সাদা দাঁড়ি, পরনে মলিন একটি লুঙ্গি, গায়ে পুরোনো ময়লা পাঞ্জাবি। বাঁ হাতে একটি ছোট চটি বই আর একটি পুরোনো পুঁথির মালা। মুখে বয়সের ছাপ স্পষ্ট, যেন ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া হয় না।
তিনি ময়ুরাক্ষীর দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কিছু বলছিলেন, যা স্পষ্ট করে বোঝা যাচ্ছিল না।
ময়ুরাক্ষী পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তার স্টাফকে জিজ্ঞেস করে—“উনি কী বলছেন?”
স্টাফটি মৃদু হেসে উত্তর দেয়, “উনি বলছেন—
এই পুতুলটাকে যত্ন করো, এই পুতুলটাকে যত্ন করো…”
ময়ুরাক্ষী অবাক হয়ে যায়। পেছনে ফিরে তাকায়, দেখে লোকটি ধীরে ধীরে মাথা নিচু করে হাঁটছেন।
ময়ুরাক্ষী কিছু বলতেই পারে না। অনেকক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে, ভাবতে থাকে ঘটনাটি নিয়ে।
এমন করে কেউ প্রথম কিছু বলল—যাকে ময়ুরাক্ষী চেনে না, জানে না।
এই কয়েকটি শব্দ, এই অচেনা আগন্তুকের মুখ থেকে শোনা, সারাজীবন মনে থেকে যাবে ময়ুরাক্ষীর।
