যখন প্রথম নিজের ফ্ল্যাটে এসে উঠেছিলাম, তখন নতুন বাড়ির স্বপ্নে বিভোর ছিলাম। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই সেই স্বপ্ন জড়িয়ে গেল এক অন্যরকম আবেগে। চুন-সুরকির ইটের স্তুপ থেকে উদ্ধার করলাম তিনটি কুকুর — ক্যান্ডির মা, মাসি এবং ওর দিদা। ওর দিদা মারা গেল সেখানেই। তখন থেকেই দুটো ছোট বাচ্চা আমাদের পরিবারের অঙ্গ হয়ে যায়। নাম দিলাম — লালি আর কালি। আমরা নিজের হাতে ওদের বড় করলাম, মানুষ করলাম।
সময় এগোলো। কমপ্লেক্সে লোকজন বাড়তে থাকল, আর সেই সঙ্গে বাড়ল বিরক্তি — কুকুরদের তাড়ানোর চেষ্টা শুরু হল। আমাদের পরিবার সেই প্রথম থেকেই বলেছিল, “না, আমরা এটা হতে দেব না।”
তারপর শুরু হয় পুলিশ, কেস, নানান অভিযোগ — আমরা কেন খেতে দিই, কেন চিকিৎসা করাই, এমন হাজারটা প্রশ্ন। তবুও আমি হার মানিনি। লালি-কালি বড় হলো, ওরাও মা হলো। লালির ছয়টা বাচ্চা হলো — সবারই অ্যাডপশন করালাম, শুধু ক্যান্ডিকে রেখে দিলাম।
এরপর আরও কিছু মেয়ে কুকুরকে স্টেরিলাইজ করালাম, ভ্যাকসিনও করালাম। কিন্তু মানুষ যখন দমাতে পারে না, তখন নির্মম হয়। ক্যান্ডির ওপর একদিন হামলা হলো — কেউ বা কারা কেটে দিল ওর শরীর।
আমি ওকে সুস্থ করালাম। আমার ছোট্ট মেয়েটা পর্যন্ত কেঁদে ভেসে গেল। ক্যান্ডির তিনবেলা ওষুধ খাওয়ানো, মলম লাগানো — সবটাই করল ও।
মানুষদের আর কী বলব! শিক্ষিত হলেও মনটা তো পশুর থেকেও অধম!
তবে ওরা জানে না — আমাকে দমিয়ে রাখা এত সহজ নয়। আজ মোট ১০টি কুকুর আমাদের পরিবারের অংশ। ওদের খাবার, ওষুধ, চিকিৎসা — সব কিছুই নিজেরা সামলাই। কাউকে কিছু চাই না। তবুও খাবার দেওয়া নিয়েও তীব্র অশান্তি হয়।
আমি শুধু বলি — ভালোবাসা যদি অপরাধ হয়, তাহলে আমি সেই অপরাধ করতেই রাজি।
পাঠকের উদ্দেশ্যে:
আপনাদের আশপাশেও যদি কোনো পথকুকুর থাকে, একটু জল দিন, একটু খাবার দিন, আর সবচেয়ে বড় কথা — একটু ভালোবাসা দিন। পৃথিবীটা তখন সত্যিই সুন্দর হয়ে উঠবে।




