বাসে বসে আছি, বাগুইহাটি থেকে একটি মেয়ে উঠলো। কলেজ যাবে। কন্ডাক্টর টিকিটের টাকা চেয়েছে, মেয়েটি ব্যাগ খুলেই হাতড়াচ্ছে। মুখ কাঁদো কাঁদো ভাব। ও মানি ব্যাগ ভুলে এসেছে। ওর সেদিন পরীক্ষা ছিলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কি হয়েছে?”
ও কেঁদেই ফেলল, বলল, “টাকা নেই, আজ পরীক্ষা কী হবে?” আমি নিজের ব্যাগ দেখলাম, মাত্র ৫০ টাকা আমার কাছে। এটা দিয়ে দিলে মাসের দুদিন কী করে চালাবো, সেটা মনে হলো। তারপর ভাবলাম, “যা হয় দেখা যাবে।” ওকে ৩০ টাকা দিয়ে বললাম, “হবে?”
মেয়েটির মুখে একটি শান্তি অনুভব হলো। বললাম, “ভালো করে পরীক্ষা দিও।”
সেদিন আমি প্রস্তুত ছিলাম না, ওটা দেওয়ার জন্য কিন্তু দিতে হয়েছিলো।
এমন করেই, যখন স্বাবলম্বী হলাম, বহু মানুষের বিপদে টাকা দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছি। বেশিরভাগ মানুষ কথা রাখেনি। আমি নিজে না খেয়ে থেকেছি বহুদিন, মাইলের পর মাইল হেঁটে এসেছি। এই মধ্যমগ্রাম-বারাসাতের রাস্তা সাক্ষী আমার রোজ একা গন্তব্যে হেঁটে যাওয়ার।
এখন আমার নিজের তিনটে গাড়ি, এই রাস্তা দিয়ে যখন যাই, তখন হয়তো এই রাস্তা সন্তুষ্ট হয় আমার ওপর। বাবাকে ছোট থেকে দেখতাম, “কম খাবো, ধারে খাবো না।” তাই আমিও কোনোদিন ধার নেয়নি কারো কাছ থেকে। ধার দিলে সম্পর্ক নষ্ট হবেই হবে।